সারাদেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী দিনগুলোর জন্য দল পাবে নতুন নেতৃত্ব। তবে সম্মেলনকে ঘিরে নানা আলোচনার মধ্যে যুক্ত হয়েছেন তাজউদ্দীন আহমদের একমাত্র পুত্র ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
সম্প্রতি সোহেল তাজের বোন মাহজাবিন আহমদ মিমির এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে এখন সোহেল তাজকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।আসলে কি রাজনীতিতে ফিরছেন, নাকি অন্য কিছু। অভিমান ভেঙে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হচ্ছেন সোহেল তাজ এমন আলোচনাই এখন সর্বত্র।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ পাচ্ছেন বলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ একান্ত সাক্ষাতকারে এ নিউজ২৪-কে বলেন, আমি ছিলাম, আছি থাকবো এবং আমি বরাবরই বলেছি দলের প্রয়োজনে আমার কাছে ডাক আসলে আমি সাড়া দেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিবেন তা অক্ষরে অক্ষরে সততার সাথে পালন করবো ইনশাল্লাহ।
সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যোগ্য সৎ ভালো মানুষ যদি আমাদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসে এবং নেতৃত্বে সহায়তা করে তাহলে দলীয়ভাবে আমরা এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবো। আমি প্রস্তুত আছি যে কোন দায়িত্ব দিলে আমি দায়িত্ব পালন করবো নিষ্ঠা এবং সততার সাথে দায়িত্ব পেলে আমি অবশ্যই সাড়া দেব। এখন আমাদের দেশের জন্য দলের জন্য একটা ক্রান্তিলগ্ন এবং এখানে নানা ধরণের বাধা বিপত্তি ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেগুলো মোকাবেলা করতে হলে আমাদের সবাইকে একত্র হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, দল শক্তিশালী থাকলে যে কোন ষড়যন্ত্র যে কোন বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবকাঠামোমূলক উন্নয়নের জোয়ার হয়েছে এবং যার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে পদ্মাসেতুর মত একটা অর্জন।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজ আরও বলেন, আমি মনে করি তার পাশাপাশি আমাদের আরেকটা দিক রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হল, নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। দলীয়ভাবে এই কর্তব্যটা পালন করা খুবই প্রয়োজন এবং দলের ভূমিকা রাখতে হবে নতুন প্রজন্মকে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে যাতে করে আগামী দুই-তিন-চার প্রজন্ম যাতে সুন্দর একটা সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের আওয়ামী লীগের কয়েকটা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
সোহেল তাজ আরও বলেন, এখনই সময় কারণ আমাদের অনেক অবকাঠামো মূলক উন্নয়ন হয়েছে যেটা দৃষ্টান্তমূলক এবং তার পাশাপাশি আমাদের এখন মানব সম্পদ গড়তে হবে। আমরা যদি মানব সম্পদ গড়তে পারি তাহলে আমরা আমাদের ওই ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারবো। সেই কারণে আমি মনে করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেটাই চান।
এক প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, নির্বাচন মুখ্য বিষয় নয়, এখন দল সঠিকভাবে গঠন করাই মূল কাজ। আর দল ভালোভাবে গঠন হলে সঠিক নেতৃত্ব আসলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পাবে না। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া সেটা নির্ধারণ করবেন নেত্রী।
সোহেল তাজ গাজীপুর ও কাপাসিয়াবাসীর কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, কাপাসিয়াবাসী আমার বাবা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, ঠিক তেমনিভাবে আমাকেও ভালোবাসছেন। কাপাসিয়া আমার রক্তের সাথে মিশে আছে।
এদিকে সোহেল তাজের ঘনিষ্ঠরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নানা বিষয়ে দেশেই কাজ করছেন তিনি। সোহেল তাজ চারদলীয় জোট সরকার আমলে রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় থেকে অনেকের নজর কাড়েন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয় অর্জন করেন।
সেসময় গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর পাঁচ মাসের মাথায় ২০০৯ সালেই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
এদিকে সোহেল তাজ রাজনীতিতে ফিরছেন এমন আলোচনায় কাপাসিয়া তথা গাজীপুরবাসীর মধ্যে এক ধরণের উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, সোহেল তাজ রাজনীতিতে ফিরলে দুর্নীতিগ্রস্তদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে। অপরদিকে সোহেল তাজের রাজনীতিতে ফেরার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে।